সৈয়দ আশরাফকে মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় নেতা খুঁজছে বিএনপি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে আওয়ামী লীগের  প্রার্থী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে চ্যালেঞ্জ ছোড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্থানীয় বিএনপি। এ জন্য প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় নেতাদের একজনকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টিও চিন্তা-ভাবনায় আনা হয়েছে।

এ আসনটি জেলার সকল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। এ কারণে স্থানীয়দের কাছে জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে এ আসনটির গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী কে হবেন তা নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে। সেই সঙ্গে দুই জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী, বিশেষ করে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নানামুখী তৎপরতায় এলাকায় বইছে নির্বাচনী হাওয়া। ১৯৭০ সালের নির্বাচন থেকেই এ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছে। প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই এ আসনে জয়ী হয়েছেন। বিশেষ করে ১৯৯৬ সাল থেকে টানা চার মেয়াদে এ আসনে নির্বাচিত হয়ে আসছেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ব্যক্তিগত ইমেজ ও সততার পাশাপাশি নির্ঝঞ্ঝাট মানসিকতার কারণে তিনি এখনও এ নির্বাচনী এলাকায় দলের একক প্রার্থী। স্থানীয় নেতাকর্মীরাও সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রার্থিতা নিয়ে অনেকটাই নিশ্চিত। তারা অতীতের ইতিবাচক কর্মকাণ্ড এবং বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিবেচনায় আগামী নির্বাচনেও এ আসনে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত বলে মনে করছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুর ইসলাম টিটু দলের সম্ভাব্য প্রার্থী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সম্পর্কে বলেছেন, ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম অত্যন্ত প্রচারবিমুখ মানুষ। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কখনও কারও অপকার করেছেন এ রকম একটি উদাহরণও নেই। এখানেই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্বাতন্ত্র্য এবং বৈশিষ্ট্য। তাই সাধারণ ভোটাররা বারবার তাকেই নির্বাচিত করেছেন। আগামীতেও তার ব্যতিক্রম হবে না।

তবে স্থানীয় বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা জানিয়েছেন, এ আসনটি মূলত বিএনপির। বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদকে কাজে লাগিয়ে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। বিএনপির নেতা অথচ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে গোপনে কাজ করেছেন, এমন একাধিক উদাহরণ রয়েছে। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে পারলে এ আসনে বিএনপিই শক্তিশালী।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, কিশোরগঞ্জ-১ আসনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামই শেষ কথা নয়। স্থানীয় বিএনপির অনৈক্যের কারণেই তিনি বারবার পার পেয়েছেন। বিএনপি যদি ভালো প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারে, তাহলে এই প্রার্থীকে ধরাশায়ী করা কোনো ব্যাপারই না। কিশোরগঞ্জে বিএনপির ভোট যেন বিএনপির বাক্সেই পড়ে তার জন্য এ আসনে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। তবে সব কিছু সময়ই বলে দেবে।

বিএনপির স্থানীয় নেতাদের দৃষ্টিতে, আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে সাধারণ মানুষের দূরত্ব রয়েছে। এমন কি দলের সব নেতাকর্মীর সঙ্গেও তার যোগাযোগ নেই বললেই চলে। এ বিষয়গুলোই আগামী নির্বাচনে কাজে লাগাতে চাইছে স্থানীয় বিএনপি। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা মনে করছেন, বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে জেলা শহর ও গোটা হাওরাঞ্চলসহ ১৩ উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুফল পাবেন আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। বিশেষ করে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে ইতিবাচক ফলাফল আসবে।

অন্যদিকে অনৈক্য ও দলীয় কোন্দলে বিপর্যস্ত জেলা বিএনপি আগামী নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিপাকে পড়েছে। এ আসন ঘিরে জেলা বিএনপিতে এখন লেজেগোবরে অবস্থা বিরাজ করছে। এলাকাভিত্তিক জনপ্রিয় স্থানীয় অসংখ্য নেতা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হিলালী, সদর উপজেলা সভাপতি রেজাউল করিম খান চুন্নু, সাবেক পৌর মেয়র আবু তাহের মিয়া, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আ ঈ ম ওয়ালি উল্লাহ রব্বানী, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়া, অসীম সরকার বাঁধন, বিএনপি কেন্দ্রীয় তথ্য সেলের অন্যতম পরিচালক ক্যাপ্টেন (অব.) সালাহ উদ্দিন আহমেদ সেলু, যুগ্ম সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল প্রমুখ। এই আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামও প্রার্থী হতে পারেন বলে স্থানীয় পর্যায়ে গুঞ্জন রয়েছে।

বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় স্থানীয় বিএনপি নাজুক পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনা দলকে আরও দুর্বল করে দিয়েছে। এ অবস্থায় দল না গুছিয়ে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত না করে নির্বাচনে গেলে খুব একটা যে ভালো ফল আসবে তা আশা করা যায় না। সেই সঙ্গে বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে চাপিয়ে দেওয়া প্রার্থীকে দলের নেতাকর্মীরা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মাসুদ হিলালী বলেছেন, গত তিনটি নির্বাচনে বিএনপির ভোট অন্যরা নিয়ে গেছে। এই অবস্থায় দলের সাম্প্রতিক অনৈক্য, বিশৃঙ্খলা আর নীতিবিবর্জিত কর্মকাণ্ডের উত্তরণ ঘটাতে পারলে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত। আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী রেজাউল করিম খান চুন্নু জানিয়েছেন, রাজনীতি করবেন বলেই তিনি লোভনীয় চাকরি ছেড়ে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলেন। দলের মনোনয়ন পেলে তিনি সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে নবদিগন্তের সূচনা করবেন, যা দেখে তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা হাল ছেড়ে পালাবেন।

আবু তাহের মিয়া বলেছেন, তিনি দুইবার কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় চেয়ারম্যান ও মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন এবং জানেন। নিশ্চয় তিনি (খালেদা জিয়া) তাকে মূল্যায়ন করবেন। আ ঈ ম ওয়ালি উল্লাহ রব্বানী বলেছেন, সাধারণ ভোটারদের ভোটের লাইনে দাঁড় করিয়ে দিতে পারলেই এ আসনে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত। তিনি দলের মনোনয়ন পাবেন বলে প্রত্যাশা করছেন। ইসরাইল মিয়া বলেছেন, তিনি উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে ছাড় দিয়েছেন। এবার তিনি সংসদ সদস্য পদে দলের মনোনয়ন চাইবেন।

সালাহ উদ্দিন আহমেদ সেলু জানিয়েছেন, তার মামা সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর হোসেন ও নাসির উদ্দিন আহমেদ শাহজাহান দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন। আওয়ামী লীগ যতবার বিজয়ী হয়েছে, ততবারই তাদের পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা ছিল। তিনি দলের মনোনয়ন পেলে বিশেষ ইউনিট গঠনের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে টানতে পারবেন। খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল জানিয়েছেন, রাজনীতির কারণে তিনি অসংখ্য বার কারাবরণ করেছেন। মনোনয়ন পেলে তিনি বিজয় ছিনিয়ে আনবেন।

এদিকে জাতীয় পার্টির নেতা দেলোয়ার হোসেন দুলাল বলেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মহাজোট থেকে আলাদা হয়ে এককভাবে নির্বাচন করবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। সেই ক্ষেত্রে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আশরাফ উদ্দিন দুলাল দলের প্রার্থী হবেন।

জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক এনাম আগামী নির্বাচনে দলের প্রার্থী হবেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর